• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আমদের সুখ-দুঃখের কথা : চতুর্থ এবং শেষ পর্ব

  রহমান মৃধা

১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১৪:০৮
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আমদের সুখ-দুঃখের কথা : চতুর্থ এবং শেষ পর্ব
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে সৌন্দর্যের মাঝে রহমান মৃধা ও তার সহধর্মিণী মারিয়া (ছবি : সংগৃহীত)

তিন তারিখে ফ্লাই না করতে পারলে মারিয়া এবং আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। জনাথান, জেসিকা এবং আমি সারাক্ষণ মারিয়ার সাথে এবং একই রুমে বসবাস করছি, কে বলবে যে আমাদের করোনা হয়নি? SOS কে সব বিষয় জানিয়ে ইমেল করতেই তাদের উত্তর কেউ থাইল্যান্ড ছেড়ে যেতে পারবে না যদি আগামীকাল অবধি প্লেটলেট লো থেকে হাই-এ না আসে।

এই ফাকে আমি ফিরে গেলাম মারিয়ার মেডিকেল জার্নালে। দেখা গেল জর সর্দি হলেই তার প্লেটলেট বিলো ১০০ হাজারে দেখা গিয়েছে।

ডাক্তাররা এখন কিছুটা আশ্বস্ত হতে শুরু করলো। নতুন করে রক্ত পরীক্ষা করতে লাগলো। প্লেটলেট শুক্রবার দুপুর বারোটার দিকে ৯০ হাজার এ দাঁড়িয়েছে। SOS এবং থাইল্যান্ডের ডাক্তার টিম মিলে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে মারিয়াকে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করে নানা ধরনের ওষুধ দিয়ে সাথে ১৫০ হাজার বাথ—এর একটি বিল হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আমদের সুখ-দুঃখের কথা : চতুর্থ এবং শেষ পর্ব

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের সৌন্দর্যে স্থানীয়দের সঙ্গে জেসিকা মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

মারিয়ার হোটেলে ফিরে আসা জীবনে নতুন করে তার দেখা মিলেছে। জনাথান, জেসিকা এবং আমি মারিয়াকে ঘিরে বসে আছি। কে, কীভাবে কী করবে না করবে তাই ভেবে অস্থির। হোটেলের সবার মনে আনন্দের বন্যা বয়ে চলেছে। রাতে ঘুমোতে যাবার আগে SOS থেকে ই-মেইল এসেছে যদি প্লেন কর্তৃপক্ষ কোভিডের কারণে প্লেন ভ্রমণ করতে বাধা দেয় তবে যেন তাদের সাথে সাথে জানাই। যদি মারিয়া কোনো রকম অসুস্থতা অনুভব করে তবে যেন ফ্লাইট ক্যান্সেল করি।

ঘড়িতে আলার্ম দিয়ে ঘুমিয়েছি। সকালে মাইক্রোবাস এসে আমাদেরকে বিমানবন্দরে নিয়ে যাবে। ঘড়ির কাঁটা বেজে উঠেছে। সবাই সুস্থ তবে আমার শরীরে জ্বর প্রায় ১০২°F এর কাছাকাছি। মারিয়ার আগমনে যতটুকু আনন্দ ফিরে অসেছিল, মুহূর্তের মধ্যে তা ম্লান হয়ে গেল। আমি মনের উপর বিশ্বাস করে ৫০০ মিলিগ্রামের একটি প্যারাসিটামল খেয়ে সবাইকে রওনা দিতে বললাম। মত-দ্বিমত থাকা সত্ত্বেও ভালোবাসা এবং স্রষ্টার ওপর বিশ্বাস রেখে মাইক্রোবাসে করে এয়ারপোর্ট এসে হাজির হয়েছি। জ্বর নতুন করে এসেছে, জনাথান পুকেট থেকে ব্যাংকক আর আমরা পুকেট থেকে স্টকহোমের পথে রওনা দিয়েছি। কিছুটা সন্দেহ ছিল।

এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ হয়তো বাধা দিতে পারতো। তবে এ মুহূর্তে নতুন কোনো রকম রেস্ট্রিকশন না থাকায় কোভিড চেক করেনি, তবুও মুখে মাস্ক পরে ভ্রমণ চলছে। পাইলট সবে বললো এ মুহূর্তে দুবাইয়ের ওপর দিয়ে প্লেন চলছে। আমি এর মধ্যে প্যারাসিটামল তিনটে খেয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে লিখে চলছি। দুবাই পার হতেই পুরো আকাশ অন্ধকারে ঢাকা পড়েছে। ভাবনায় ঢুকেছে রাতের পরে দিন হবে। আমাদের এই ভ্রমণে নিশ্চয়ই ভালো-মন্দে ভরা থাকবে। শুধু কি বিরোহের কথা দিয়ে লিখা শেষ হবে? প্লেনে বসে প্রথম থেকেই কেন যেন মনে হলো আন্দামান দ্বীপ এবং তার বিউটি নিয়ে আমি অবশ্যই লিখবো।

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আমদের সুখ-দুঃখের কথা : চতুর্থ এবং শেষ পর্ব

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের সৌন্দর্যে রহমান মৃধার মেয়ে জেসিকা মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

দেরি কেন? যে কথা সেই কাজ। আমি ভালোমন্দ সবই শেয়ার করি। জীবন পুষ্পশয্যা নয়। শুধু ভালো কিছুর মধ্যে দিয়ে জীবন নয়। আমার ভ্রমণের উদ্দেশ্য প্রথম থেকেই ভেবেছি আমাদের ভ্রমণ আনন্দভরা হবে। কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি ট্রাজেডি এবং বিরহের কথা লিখতে হবে। আমার শেয়ার ভ্যালুর কনসেপ্ট থেকে যা শিখেছি তার ওপর ভিত্তি করে ভাবলাম পুরো ঘটনাটি শেয়ার করি।

এই ভ্রমণে অনেক চেনা-অচেনা মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। দেখেছি থাইল্যান্ডের মানুষের হৃদ্যতা, আতিথেয়তা। দেখেছি স্রষ্টার অপূর্ব সৃষ্টি। হয়েছে নিজ পরিবারের মধ্যে ভালোবাসা আরও গাঢ়। শিখেছি এবং দেখেছি বিপদে কিভাবে ইউনিটি তৈরি হয়।

ঝরেছে অনেক অশ্রু ভালোবাসার কারণে। ইনস্যুরেন্সের গুরুত্ব কতো সে সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা হয়েছে। সতর্কতা বেড়েছে নিজ শরীরের প্রতি। কেন শরীরের ওপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। সর্বোপরি সাগরের মাঝে মহাসাগরের দেখা। মানে যে সমস্যাগুলোর মোকাবেলা করেছি তার চেয়ে অনেক সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শিখেছি, জেনেছি। তারপর স্রষ্টার রহমতে মহাবিপদে সেই সুদর্শন জার্মান ছেলেটি ফেরেশতার মতো এসে মারিয়ার জীবনের এত বড় বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল! আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আবারও প্রমাণ করে দিলেন তিনি কী না পারেন!

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আমদের সুখ-দুঃখের কথা : চতুর্থ এবং শেষ পর্ব

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের সৌন্দর্য (ছবি : সংগৃহীত)

ভালোবাসা যেমন ধরা বা ছোঁয়া যায় না তবে তা অনুভব করা যায়। তবে প্রকৃতি যেমন দেখা যায় তেমন অনুভব করা যায়, শুধু অনুভবে হৃদয় অনুভব করে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে।

আরও পড়ুন : আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আমদের সুখ-দুঃখের কথা : পর্ব-৩

আরও পড়ুন : আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আমদের সুখ-দুঃখের কথা : পর্ব-২

আরও পড়ুন : আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আমদের সুখ-দুঃখের কথা : পর্ব-১

ভ্রমণে আনন্দ, ভ্রমণে বিষাদ, কথাটি হয়তো অনেকেই শুনেছেন এবং বাস্তব জীবনে উপভোগও করেছেন তবুও আমাদের এত সুন্দর ভ্রমণটা শুধু কি বিরহের বার্তা বহন করবে?

শেষ...।

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট) ফাইজার, সুইডেন।

rahman.mridha@gmail.com

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: inbox.odhikar@gmail.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড