• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আমদের সুখ-দুঃখের কথা : পর্ব-২

  রহমান মৃধা

১১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:০৪
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আমদের সুখ-দুঃখের কথা : পর্ব-২
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে সৌন্দর্যের মাঝে ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা ও তার সহধর্মিণী মারিয়া (ছবি : সংগৃহীত)

প্রথম দেখা পুরো পরিবার বহু বছর পর এবং একসঙ্গে তাও ২৭ এবং ২১ বছরের ছেলে-মেয়ে এক সঙ্গে আন্দামান দ্বীপ পুঞ্জগুলো ঘুরব, মজা করব, ভাবতেই একটু অন্যরকম মনে হতে লাগল। জনাথান ক্রাবি দ্বীপের যে রেস্টুরেন্ট পছন্দ করেছে তার নাম ফ্যামিলি রেস্টুরেন্ট অনেক ধরনের খাবারের অর্ডার দিয়েছে।

বেশিরভাগই শাকসবজি এবং মাছের। খাবারগুলো মজা করেই সবাই খেলাম যদিও জেসিকা কিছুটা সাবধানতার সাথে প্রথম দিনের খাবারগুলো খেল। খাবার টেবিলেই পরিকল্পনা শুরু হয়ে গেল কবে, কখন, কোথায় কীভাবে যেতে হবে এবং কার কী করা বা দেখার শখ সেটা যেন ওয়াটস অ্যাপে শেয়ার করি যাতে করে কারো কোন দেখা বা ঘোরার স্বপ্ন অপূর্ণ না থাকে।

মজার ব্যাপার হলো সবাই পছন্দ করেছে দ্বীপ ঘুরবে, প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটাবে, সাগর আর পাহাড়ের সঙ্গে পুরোটা সময় কাটাবে। পানির পিপাসা লাগলে ডাবের পানি আর খিদে লাগলে থাই সি ফুড এবং সন্ধ্যা হলে হোটেলে ফিরে গোসল শেষে এক সঙ্গে ডিনার, তারপর গ্রামের বাজারগুলো একটু ঘুরে দেখা, একটু এদের জীবন ব্যবস্থাকে বুঝতে চেষ্টা করা, তারপর ক্লান্তিকে শান্ত করতে ঘুম। সাগরের ঢেউ ফ্যানের বাতাস সব মিলে রাত হঠাৎ কখন যে সকাল হয়ে গেল জানা হলো না। সাগরের পাড়ে ভোরের বায়ু সত্যি নিদারুণ এক অপূর্ব মনোমুগ্ধকর অনুভূতি।

সূর্য দেখার আগে স্রষ্টার প্রতি কিছুক্ষণ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সূর্যকে সঙ্গে রেখে আজ চারটি অ্যাইলান্ড তাদের নিজ নিজ গুণাগুণ নিয়ে হাজির হয়েছে। পাহাড় কথা বলে না, কথা বলতে সাহায্য করে। সাগর দেখে না, সে দেখায়। প্রতিটি পাহাড় দাঁড়িয়ে রয়েছে আদেশের অপেক্ষায়। সাগর হাজার চেষ্টা করেও তার দায়িত্ব থেকে বিচলিত হতে পারছে না।

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আমদের সুখ-দুঃখের কথা : পর্ব-২

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে সৌন্দর্য (ছবি : সংগৃহীত)

শুকনো ভেজা নানা ধরনের বালুর কণাগুলো ঝক ঝক করে পাহাড়ের চারপাশ চমৎকার পরিবেশে শীতল পাটির রূপ ধারণ করে অপেক্ষা করছে কখন পর্যটকরা সেখানে আসবে আর শান্ত শীতল হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। কেউ সাদা দেহকে পুড়িয়ে করছে ব্রাউন। কেও ব্রাউন থেকে কালো। আমি তেমন কয়েকটি দ্বীপে সময় কাটিয়েছি।

যে সকল বিচ আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে ভ্রমণ করেছি তার মধ্যে রয়েছে রাইলি বিচ, চিকেন দ্বীপ, হং দ্বীপ, মানকি দ্বীপ, জেমস বন্ড দ্বীপ, বাম্বু দ্বীপ, লাঙ্কবি দ্বীপ, পিপি দ্বীপ, মায়া বে বিচ, ট্যুব এবং মোর দ্বীপ।

প্রথমে মনে হবে প্রতিটি বিচ প্রায় একই রকম দেখতে। হয়তো ঠিক যদি বলি বাংলাদেশের সবাইকে দেখতে অনেকটা ইন্ডিয়া বা পাকিস্তানিদের মতো লাগে তাহলে অনেকে ক্ষেপে যাবে কারণ তার মধ্যে পার্থক্য বা ভেদাভেদ করার মতো বোধগম্যতা তৈরি হয়নি। যা কিছু দেখিনা কেন তাকে হৃদয় দিয়ে দেখতে হবে, ভাবতে হবে, অনুভব করতে হবে, তারপর শুধু পার্থক্য নয় স্রষ্টার ক্ষমতা, দক্ষতা, মহানুভবতাসহ সবকিছু বোঝা যাবে।

রাইলি বিচের একটি পাহাড় কল্পনায় দেখতে পুরুষ অঙ্গের মত মনে হবে, যদি ঐভাবে চিন্তা করা হয়। অতীতে এমনটি করে বৌদ্ধ জাতি চিন্তা করেছে, যার ফলে সেই পাহাড়ের নিচে একটি গহীন সুড়ঙ্গ রয়েছে যা সমস্ত বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসীদের জন্য একটি যৌন মন্দিরে পরিণত হয়েছে। অনেকেই সেই মন্দিরে এসে ফুলের মালা সহ নানা বিনোদনের জিনিসপত্র রেখে মনে মনে নিশ্চয়ই কিছু চেয়ে থাকে।

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আমদের সুখ-দুঃখের কথা : পর্ব-২

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের মার্কেটে রহমান মৃধার মেয়ে জেসিকা মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

একটি মেয়েকে পুজো করতে দেখলাম, তার পুজো শেষ হলে তাকে জিজ্ঞেস করলাম পুরুষ জাতি না হয় তাদের যৌন অঙ্গ বড় হয় সেই কারণে এখানে আসে তা তুমি কু কারণে পুজো করছো? মেয়েটি হেসে দিয়ে বললো আমি এসেছি আমার স্বামীর যেটা আছে সেটা যেন ঠিকমতো কাজ করে। কিছুক্ষণ বিনোদনের এই আলোচনা শেষ করতেই দেখলাম পরে শুধু বৌদ্ধ নয় নানা ধর্মের লোকের ভিড় সেখানে।

আরও দুটি দ্বীপ যেমন ট্যুব এবং মোর দ্বীপ। জোয়ার ভাটার কারণে পানি যখন কমতে থাকে তখন এই দুই দ্বীপের পাহাড়ের মধ্যে চমৎকার রাস্তা তৈরি হয় যাকে থাইল্যান্ডে বলে ‘Unseen in Thailand’. এই মিরাকেল রাস্তা দিয়ে যখন হেঁটে যাচ্ছিলাম তখন দুই পাশে সাগর আর মাঝখানে এই পথ, পথের মাঝখান দিয়ে হাটতে যে কী মজা ছিল সে অনুভূতি না আসলে তো হবে না। পাহাড় দুটোর দূরত্ব খুব একটা বেশি না, ত্রিশ খেকে চল্লিশ মিনিটের দূরত্ব হবে। সকালে বোটে করে দ্বীপ দুটো ভ্রমণ করেছি, তখন ছিল পানিতে ভরা, পরে বিকেলে এসে দেখি দ্বীপ দুটোর মাঝে স্বচ্ছ বালুর ঝকঝকে রাস্তা।

নৌকো ছাড়া এক দ্বীপ থেকে অন্যদ্বীপ যখন হেঁটে যাচ্ছিলাম তখন মনে পড়ে গেল সেই মুসা (আ.) নবীর বিস্ময়কর গল্পের কথা। তিনি তার সময় সাগরকে দুই ভাগে ভাগ করে মানুষ জাতিকে অবাক করেছেন। আমি স্রষ্টার ক্ষমতা দেখে অভিভূত হয়েছি একইসাথে ভেবেছি জোয়ার ভাটার ক্ষমতা, মমতা এবং দক্ষতা সম্পর্কে।

আমরা আরও যে দ্বীপগুলো ভ্রমণ করেছি তার মধ্যে রয়েছে মায়া বে দ্বীপ, হং দ্বীপ, হং লাগুন, চিকেন এবং পাদা দ্বীপ। মনে কি পড়ে লিনওনার্দো ডিক্যাপ্রিও তার ফিল্ম "দ্য বিচ" ছবির কথা? এই ছবি করে তিনি বিখ্যাত হয়েছেন। মূলত মায়া বেতে পুরো ছবির শুটিং হয়েছে। মায়া বের চেয়ে সুন্দর কোনো বিচ আছে কিনা তা আমার জানা নেই। তারপর যেসব দ্বীপের সঙ্গে ভালোবাসা গড়ে উঠেছে তার মধ্যে হং দ্বীপ এবং হং লাগুন, চিকেন এবং পাদা দ্বীপ উল্লেখযোগ্য।

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আমদের সুখ-দুঃখের কথা : পর্ব-২

আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে সৌন্দর্য (ছবি : সংগৃহীত)

হং দ্বীপে স্নোরকেল করা, ব্লু লাগুনে কিছুক্ষণ সময় কাটানো এবং মাছের সাথে বন্ধুত্ব করা ছিল এক বিশাল ঘটনা। সাগরের নানা রঙয়ের মাছগুলো যখন আমাকে ঘিরে আছে তখন সবার চোখ আমার দিকে। সবাই ভাবছে কীভাবে সম্ভব? আমার মনে হচ্ছিল একটু রুটি দিলে নিশ্চয় মাছ আসবে, যে ভাবনা সেই ফল। অত মাছ সেদিন আমার চারপাশ ঘিরে ছিল যা দেখে অনেকেই আনন্দ উপভোগ করেছিল।

পুকেট দ্বীপ পানি পথে খুব একটা বেশি দূরে নয়। সেখানে মূলত গিয়েছিলাম জেমস বন্ড দ্বীপ দেখতে। কী রহস্য রয়েছে হাজার দ্বীপের মাঝে জেমস বন্ড দ্বীপে এবং কেন জেমস বন্ড মুভিতে এই দ্বীপ বেছে নিয়েছে?

আরও পড়ুন : আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আমদের সুখ-দুঃখের কথা : চতুর্থ এবং শেষ পর্ব

আরও পড়ুন : আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আমদের সুখ-দুঃখের কথা : পর্ব-৩

আরও পড়ুন : আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে আমদের সুখ-দুঃখের কথা : পর্ব-১

দ্বীপটিকে দেখলেই বোঝা যায় কেন জেমস বন্ড নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৭৪ সালে জেমস বন্ডের “দ্য ম্যান উইদ দ্য গোল্ডেন গান” চলচ্চিত্রের শুটিং হয় এই দ্বীপে। সেই থেকে এটা বেশ বিখ্যাত এবং নামও হয়ে গেছে জেমস বন্ডের নামেই।

চলবে…

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট) ফাইজার, সুইডেন।

rahman.mridha@gmail.com

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: inbox.odhikar@gmail.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড