কে এইচ আর রাব্বী
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন বা শব্দ প্রয়োগ করছেন, তাতে তিনি নিজেই ফেঁসে যাচ্ছেন। কেননা বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের শামিল। আর এতেই একে একে ফাঁসতে শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। তবে ট্রাম্পই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নন, যার বিরুদ্ধে যুদ্ধকালীন এ রকম অভিযোগ উঠল।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘বিবিসি নিউজ’ জানায়, ইরানের ৫২ সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলা হুমকি দিয়ে এরই মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও তার কর্মকর্তারাই দ্রুত বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছেন, সে রকম কোনো কিছুই ঘটার সম্ভাবনা নেই। এর আগে তিনি ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একজন জেনারেলকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি রাষ্ট্রের সরকার ঠিক তখনই পদক্ষেপগুলো নিতে পারে, যখন তারা আত্মরক্ষার জন্য চিন্তিত হয়। মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, তারা ভবিষ্যতের হামলা ঠেকানোর জন্যই এমনটা করেছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন জাতিসংঘের বিচার বহির্ভূত হত্যা বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোটিয়ের অ্যাগনেস কালামার্ড। একটি টুইট বার্তায় তিনি বলেছেন, জাতিসংঘের চার্টে যা রয়েছে, এই হামলা তার মধ্যে পড়ে না।
বিশ্লেষকদের মতে, কোনো রাষ্ট্র বা সংগঠন অপরের সাংস্কৃতিক স্থাপনায় হামলা চালালে তা ১৯৫৪ সালের হেগ কনভেনশন ফর দি প্রোটেকশন অব কালচারাল প্রোপার্টির মতো আন্তর্জাতিক চুক্তিকে লঙ্ঘন করে।
এ দিকে গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) ইরাকের পৃথক মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। প্রায় ২২টা মিসাইল দিয়ে চালানো এ অভিযানে অন্তত ৮০ মার্কিন সেনার প্রাণহানি ঘটে বলে দাবি করে তেহরান।
এর পরপরই ইরান ইস্যুতে নিজের সুর পাল্টাতে শুরু করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিধ্বংসী নীতি থেকে বেরিয়ে তেহরানকে একটি শান্তির প্রস্তাবও দিয়েছেন। অথচ এর আগে বেশ কয়েকবার ইরানের যে কোনো হামলায় ভয়ঙ্কর জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি।
ট্রাম্প বলেছেন, ইরান যতদিন সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে বের হয়ে না আসবে ততদিন তারা কোনো উন্নতি করতে পারবে না। আমরা চাই, অন্যান্য দেশের মতো ইরানও উন্নত হোক। এ জন্য তাদের সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু আইএস। আমরা একসঙ্গে তাদের মোকাবিলা করতে চাই।
মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা সম্পর্কে তিনি বলেন, ইরানের হামলায় কোনো মার্কিন সেনা হতাহত হয়নি। আমাদের রাডার সিস্টেম খুব ভালো কাজ করায় হতাহত এড়ানো গেছে। আমাদের সামরিক বাহিনী পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী। কিন্তু আমরা তা ব্যবহার করতে চাই না।
এমন প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সামরিক ক্ষমতা হ্রাস করতে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তিনি যাতে কখনোই ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে না পারেন সে জন্য পদক্ষেপটি নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি বিশ্লেষকদের।
মার্কিন গণমাধ্যম ‘সিএনএন’ জানায়, মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলার পরপরই বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ঘোষণাটি দেন।
ট্রাম্পের যুদ্ধ-ক্ষমতা হ্রাসের বিষয়ে পেলোসি বলেছেন, মার্কিন জনগণকে নিরাপদে রাখার জন্য আমাদের দায়িত্বের প্রতি সম্মান দেখানো প্রয়োজন। তাই তেহরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আশঙ্কায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতা হ্রাসের জন্যই মার্কিন কংগ্রেসে প্রস্তাবটি তোলা হবে।
আরও পড়ুন :- ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ভয়াবহ হামলা (ভিডিও)
তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকাণ্ড আমাদের সেনাবাহিনী, কূটনীতিক এবং অন্য বেসামরিক নাগরিকদের বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন করেছে। বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি পরিষদের নারী সদস্য এলিসা স্লটকিনের নেতৃত্বে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হবে।
আরও পড়ুন :- যুক্তরাষ্ট্রকে রুখতে যা আছে ইরানের অস্ত্রাগারে
এর আগে শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ভোরে ইরাকের বাগদাদ শহরের বিমানবন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে চালানো সেই অভিযানে তেহরান সমর্থিত পপুলার মবিলাইজেশন ফোর্সেসের (পিএমএফ) উপপ্রধান আবু মাহদি আল-মুহান্দিসসহ বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য প্রাণ হারান।
সূত্র : ‘বিবিসি নিউজ’, ‘সিএনএন’ ও ‘রয়টার্স’
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: inbox.odhikar@gmail.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড