• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৪০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কুষ্টিয়ার বইমেলা : কয়েকটি প্রস্তাব

  ওয়াহেদ সবুজ

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৩৫
ওয়াহেদ সবুজ
ওয়াহেদ সবুজ

কয়েক বছর পর পুনরায় কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরে বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। 'পুনরায়' বলার কারণ হলো, এই মেলা আগেও হতো, মাঝে কয়েক বছর বন্ধ ছিল। এ বছর সেই পুরোনো বইমেলা তার পুরাতন আঙ্গিকেই, একই স্থানে, একই ধরনের প্যান্ডেল, একই সেই বইয়ের দোকানগুলোর স্টল...। কোনো নতুনত্ব নেই, কোনো উন্নতি নেই, কোনো উন্নতির চেষ্টাও নেই। অথচ এই জেলাকে বলা হয়, 'বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী'। আসলেই কি 'সাংস্কৃতিক রাজধানী'? আমি তো দেখেছি, ঢাকাতে গিয়ে বললে বেশিরভাগ মানুষই এটা মানতে চান না; অন্যান্য জেলায় বেশিরভাগ মানুষ জানেনও না। ঠিকই তো আছে। কী কারণে 'সাংস্কৃতিক রাজধানী' মানতে হবে? রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন বলে? লালনভূমি বলে? মশাররফ ছিলেন বলে? এমন তো বহু জেলায় আরও বহু সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তি এসেছিলেন, জন্মেছেন। শুধু এক বরিশালেই এমন কত ব্যক্তিত্ব জন্মেছিলেন, বসবাস করতেন- সে হিসাব কেউ কখনও করেছে? যৌক্তিক হোক বা না হোক, অনেকেই মানুক বা না মানুক, আমরা কুষ্টিয়ার মানুষেরা মানি এটা সাংস্কৃতিক রাজধানী, আমাদের ভাষা সবচাইতে মিষ্টি- এগুলো আমাদের গর্ব দেয়, অহংকার দেয়। আমাদের হৃদয় আন্দোলিত হয় এগুলো ভাবলে। কিন্তু কথা হচ্ছে, এই যে 'সাংস্কৃতিক রাজধানী'র মতো এত বড়ো একটা তকমা আমরা অবিসংবাদিতভাবে অর্জন করতে চাই; শুধু চাইলেই হবে? করণীয় কিছু নেই? বছরে অন্তত একটা আড়ম্বরপূর্ণ বইমেলা আমরা আয়োজন করতে পারি না? কুষ্টিয়ার এই বইমেলা আয়োজন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। সে কারণে কি এটা কালেক্টরেট চত্বরেই হতে হবে? কেউ কেউ বলবেন, কেন্দ্রীয় শহিদমিনার তো ওখানেই। বাংলা একাডেমি প্রতিবছর মাসব্যাপী এমন বিশাল একটা বইমেলার আয়োজন করে; এটা তো শহিদমিনার এলাকায় হওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। তাহলে আমাদের কেন এটা ভাবতে হবে?

কুষ্টিয়ার এই বইমলাকে প্রকৃত অর্থেই 'বইমলায়' উন্নীত করতে হলে সর্বাগ্রে যেটা করা দরকার, সেটা হলো এর স্থান পরিবর্তন। আরও বিস্তৃত জায়গায় এর আয়োজন করতে হবে। এক্ষেত্রে সবচাইতে উপযুক্ত জায়গা হতে পারর কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠ। এমন চমৎকার একটা জায়গা আমরা কেন আমাদের স্থানীয় শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে ব্যবহার করবো না? এই স্থানটিতে যদি কোনো জটিলতা থাকে, সেক্ষেত্রে কুষ্টিয়া ইসলামীয়া কলেজ মাঠে হতে পারে। এখানেও সমস্যা থাকলে নিদেনপক্ষে কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে তো হতেই পারে। কেবল স্থান পরিবর্তনেই হবে না, এর সময়সীমাও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আধামাসের না হলেও অন্তত ৭ থেকে ১০ দিনের তো হতেই পারে। এই শহরেই প্রতি বছর বাণিজ্য মেলা হয় পুরো এক মাস ধরে। সেখানে বইমেলা জন্য তিনটা দিন খুবই অপমানজনক। এ স্থানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, তিন দিনেই এই মেলায় কয়েক লক্ষ টাকার বই বিক্রি হয়। পাঠকের ভিড় সামাল দিতে বেগ পেতে হয়। মেলার সময় বাড়লে বই ক্রয়বিক্রয়ের পরিমাণও বাড়বে-সন্দেহ নেই। তাছাড়া স্থানীয় লেখকদের বই বিক্রির ক্ষেত্রেও এই বইমেলা দারুণ ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে, যদি মেলার সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়। কুষ্টিয়ার এই বইমেলার আরও একটি বড়ো সমস্যা হচ্ছে, এখানে কেবল স্থানীয় বইয়ের দোকানগুলোর স্টল বসে। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বলতে কেবল 'প্রথমা' প্রকাশনের স্টল পাওয়া যায়। মেলার সময় বাড়ালে দেশের বড়ো বড়ো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আমন্ত্রণ জানানো যাবে এবং তাদের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এটা করা গেলে কুষ্টিয়ার এই বইমেলা সত্যিকার অর্থেই লেখক-পাঠকের এক দারুণ মিলনমেলায় রূপ নিতে পারবে।

দেশের 'সাংস্কৃতিক রাজধানী'-তে বছরে একটামাত্র বইমেলা হয়, সেটাকে সার্থক করে তোলার জন্য এই বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখাই যায়, না-কি?

লেখক : ওয়াহেদ সবুজ

শিক্ষক, সাহিত্যিক, সংগঠক ও সাংবাদিক

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- inbox.odhikar@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: inbox.odhikar@gmail.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড