• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দৈনিক অধিকার নবান্ন সংখ্যা-১৯

গল্প : সে

  সাবিকুন নাহার নিপা

০৫ মার্চ ২০২০, ১৪:০৭
গল্প
অমিত দিপালিকে অনেক কথা বললেও দিপালির উত্তর শুধু হু হা তে সীমাবদ্ধ ছিল (ছবি : সম্পাদিত)

এসব কি শুনছি অমিত? দিপালিকে তুই মেনে নিয়েছিস? তুই কি সত্যিই মানুষ? সাগরের কথার কোন জবাব না দিয়ে অতি আগ্রহে বিরিয়ানি খাচ্ছে অমিত। সাগর আবারও বলল, কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন? - কি বলব? - দিপালিকে কেন ঘরে তুলেছিস? তোর কি লোকলজ্জার কোন ভয় নেই? - আমার বউকে ঘরে এনেছি তাতে লোকলজ্জার ভয়ের কি আছে? - তোর মাথার ঠিক আছে তো? - ঠিক আছে একদম। আমি লোকের খাইও না পরিও না তাই এসব কথায় কান না দিয়ে বাসায় যা। রেস্তোরাঁ থেকে বেড়িয়ে সিগারেট ধরিয়ে হাঁটছে অমিত। ৩ বছর আগে পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করে আনে দিপালিকে। দেখতে গিয়ে বেশ পছন্দ হয়েছিলো দিপালিকে। শুধুমাত্র একটি শাড়ি পরেই অমিতের সাথে দেখা করতে এসেছিলো আর কোনো সাজগোজ ছিলো না। না লিপিস্টক আর না কোনো কাজল। সে কারণে অমিত দিপালিকে পছন্দ করেছে। অমিত দিপালিকে অনেক কথা বললেও দিপালির উত্তর শুধু হু হা তে সীমাবদ্ধ ছিল। অমিত দিপালিকে জিজ্ঞেস করেছিল যে তার কোন পছন্দ আছে কি না? দিপালি তখন বলেছিল যে বাবা মার পছন্দই তার পছন্দ।

সপ্তাহ খানেক পরেই বিয়ে হয়ে যায় অমিত আর দিপালির। বিয়ের রাতে অমিত ভেবেছিল যে নতুন বলে হয়তো বা এমন আচরণ করছে আস্তে আস্তে হয়ত ঠিক হয়ে যাবে। অমিত কাস্টমসে জব করতো তাই ছুটি কম থাকায় তারাতারি তাকে ঢাকায় ফিরতে হয়েছিল। ফেরার সময় সে দিপালিকে নিয়ে আসে। চাকরির সুবাদে অমিত কোয়ার্টারে থাকত তাই দিপালিকে সেখানে নিয়ে আসে।

যত দিন যায় দিপালির আচরণে কোন পরিবর্তন নেই। কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় কিন্তু নিজে থেকে কোন কথা বলে না। অমিত অফিস শেষে বাসায় আসলে দিপালি ততক্ষণে খেয়ে ঘুমিয়ে পরে। টেবিলে অমিতের জন্যে খাবার রাখা থাকে সেটা খেয়ে অমিত ঘুমিয়ে যেত। একদিন সকালে অমিত দিপালিকে পড়াশুনা করার জন্যে বলে। একটা ভার্সিটিতে দিপালিকে এম এ ভর্তি করে দেয়। দিপালি ভালভাবেই পড়াশুনা করতে থাকে। অমিত আর দিপালির সম্পর্ক আগের মতই থাকে কোন পরিবর্তন হয় না। দিপালি পাশ করে বেরিয়ে একটা স্কুলে চাকরি শুরু করে অমিত কোন আপত্তি করেনি। বরং অমিতের চিন্তা কম হয় যে দিপালি কোন একটা কাজে নিজেকে বিজি রাখুক। দুই বছরের সংসারে অমিত কখনও দিপালিকে জিজ্ঞেস করেনি যে সে কেন এরকম করছে। বরং অমিত চেয়েছে দিপালি ভালো থাকুক।

কিন্তু হঠাৎ একদিন অফিস থেকে ফিরে দিপালিকে খুঁজে না পেয়ে দিপালির লেখা চিঠি পায় অমিত। সেখানে কোথায় যাচ্ছে কার সাথে যাচ্ছে কিছুই লেখা থাকে না। শুধু এক লাইন লেখা থাকে

‘আমি যাচ্ছি। আমার পক্ষে আপনার সাথে থাকা সম্ভব না।’

অমিত ইচ্ছে করলেই জানতে পারতো দিপালি কোথায় আছে কিন্তু সেটা ও চায়নি। ও চেয়েছে দিপালি ভালো থাকুক। আপন মানুষটা দূরে গেলেও ক্ষতি নেই কিন্তু ভালো থাকলেই হলো। হোক না একটুখানি কষ্ট। দিপালি চলে যাওয়ার পর সবাই অমিতকে জিজ্ঞেস করে কেন চলে গেল ও। সবার প্রশ্নের উত্তরে অমিতের নীরব চাহনি দেয়া ছাড়া আর কিছুই ছিলো না। দিপালির বাবা মারা যাবার আগে অমিতকে বলেছিল ক্ষমা করে দিতে। বাবা মারা যাওয়ার খবর শুনেও দিপালি আসেনি। হয়তো বা বাবার উপর অনেকখানি অভিমান ছিল। নয় মাস সতেরো দিন পর দিপালি অমিতকে ফোন করে বলেছিলো ও কমলাপুর রেলষ্টেশনে আছে। অমিত খুব খুশি হয়ে যায় দিপালিকে আনতে। দিপালি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। ওর চেহারার লাবণ্যতা নেই চোখের নিচে কালি পরা। দিপালিকে দেখে অমিতের খুব কষ্ট হয়। অমিত দিপালিকে একবারও জিজ্ঞেস করেনি এতদিন কোথায় ছিলো। দিপালিও কিছু বলেনি।

আরও পড়ুন : গল্প : তাতাই উপাখ্যান

অমিতের আত্মীয়স্বজন বন্ধু পাড়া প্রতিবেশীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে অমিত অভ্যস্ত হয়ে গেছে। অমিত কাওকে বুঝাতে পারেনি, একবার কাওকে ভালোবাসলে তাকে খারাপভাবা কোনভাবেই সম্ভব না।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: inbox.odhikar@gmail.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড