নিশীতা মিতু
নারীর জীবনে নিত্যদিনের কাজগুলোর একটি হলো রান্না করা। সবাই কম-বেশি রান্না করেন। তবে কারো কারো হাতের রান্না একটু বেশিই ভালো হয়। বর্তমান সময়ে যারা ভালো রান্না করেন তারা অনেকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন অনলাইন ব্যবসাকে। ঘরে বসে রান্না করে আয় করা তাদের জন্য যেমন সহজ, তেমনই যারা ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে চান তাদের জন্যও এটি ভালো মাধ্যম। এমনই একজন অনলাইন উদ্যোক্তা সাফিনাজ মোস্তফা। খাবারের অনলাইন প্রতিষ্ঠান ‘দি সাফিনাজ কিচেন’-এর কর্ণধার তিনি। অধিকারের সঙ্গে স্বল্প সময়ের আড্ডায় জানা হয় তার ব্যবসা, স্বপ্ন আর পথচলা নিয়ে।
জন্মসূত্রে সাফিনাজ ভোলার মেয়ে হলে বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা, সংসার সবকিছু রাজধানী ঢাকায়। ছোটবেলা থেকেই চুপচাপ স্বভাবের ছিলেন তিনি। বড় হয়েছেন সবার আদরে। দাদি, মা, ফুফু, খালা সবাই মজার মজার রান্না করতেন। আর তাই ছোটবেলা থেকে বাহারি পদের খাবারের সঙ্গে পরিচিত সাফিনাজ।
মজার মজার খাবার খেতে পছন্দ করেন তিনি। তবে বিয়ের আগে কখনো তেমন রান্না করেননি। শুনে একটু অবাক হলাম বটে। খাবার নিয়ে কাজ করছেন অথচ বিয়ের আগে রান্না তেমন একটা করেননি, তবে ব্যবসায় আসা কীভাবে? জানতে চাই তার কাছে।
ব্যবসায় আসার গল্প বলতে গিয়ে সাফিনাজ বলেন, অর্থনীতিতে মাস্টার্স শেষ করার পর চিন্তা ছিল চাকরি করবো। সেরকম চেষ্টা ও প্রস্তুতিও ছিল। পড়াশোনা ও কিছু সমস্যার কারণে আমার বিয়ের ৭ বছর পর আমার সন্তান সাকাফির জন্ম হয়। তাই ওকে রেখে চাকরি করার কথা আর চিন্তা করতে পারিনি।
তবে কিছুদিন শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত ছিলাম। এরপর করোনা আসায় সব বন্ধ হয়ে যায়। করোনায় সবাই ঘরবন্দি হয়ে ছিলাম। ততদিনে রান্নায় আমার হাতও পাকা হয়ে গেছিল। প্রায়ই মজার মজার খাবার রান্না করতাম আর সবাই মিলে খেতাম। এমনই একদিন খাবার খেতে খেতে আমার দেবর মিরাজ আমাকে অনলাইনে খাবার নিয়ে রান্না করার কথা বললো। আমারও শুনে ভালো লাগলো। তখনই ঠিক করলাম খাবার নিয়েই কাজ করবো। এরপর মিরাজের সাহায্যেই এই জগতে পা রাখা।
২০২০ সালের মে মাসে যাত্রা শুরু করে ‘দি সাফিনাজ কিচেন’। সব ধরনের খাবার নিয়েই কাজ করছেন সাফিনাজ। এখানে গ্রাহক যেমন ভাত-ভর্তা পাবেন, তেমনি পাবেন পোলাও, রোস্ট, টিকিয়া, বিরিয়ানি, জর্দা, মিষ্টির মতো খাবারগুলো।
‘দি সাফিনাজ কিচেন’ এর কিছু খাবার
ক্রেতা খুব গুরুত্বপূর্ণ সাফিনাজের কাছে। খাবার তৈরির সময় তিনি মাথায় রাখেন ঠিক কীভাবে রান্না করলে তার প্রিয়জনেরা সন্তুষ্টি নিয়ে খাবার খেত। তার কাছে প্রতিটি ক্রেতাই প্রিয়জন। সাফিনাজ বলেন, আমি সবসময় চেষ্টা করি খাবারের মান ও পরিমাণ দুটোই যেন ঠিক থাকে। সে সঙ্গে ভিন্নতা আনতেও চেষ্টা করি। খাবারের মান আর স্বাদের ব্যাপারে কোনো ছাড় দিই না আমি। তাই হয়ত আমার রিপিট গ্রাহকের সংখ্যা অনেক বেশি।
করোনার সময় ব্যবসা শুরু করে বেশ কিছু ভালো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন সাফিনাজ। গল্পে গল্পে সেসব স্মৃতিচারণ করলেন। বললেন, সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আমার প্রতিষ্ঠানের ১০ রকম ভর্তা আর বউয়া ভাত, যা ছিল করোনায় আক্রান্ত রোগীদের মুখে রুচি আসার মতো একটা খাবার। এমনও হয়েছে অনেক দিন কিছু খেতে পারছে না কিন্তু মজার মজার ভর্তা দিয়ে পেট ভরে খেয়েছে। ক্রেতারা যখন কল করে এমন কথাগুলো বলতো তখন খুব খুশি হতাম। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসও অনেকটা বেড়ে যেত।
ব্যবসায় আসা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ে টিকে থাকার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান পরিবারের বলে মনে করেন সাফিনাজ। তিনি বলেন, আমার পরিবারের সমর্থেই এ পর্যন্ত এসেছি। আমি যখন ব্যবসা শুরু করি তখন আমার শ্বশুরবাড়ির সব আত্মীয় আমার কাছে খাবার অর্ডার করতেন। বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিতে চাই মিথুন আপু, রিদী, রুহিন, অনুভা, নিশু, তানিম ভাইয়া, বিন্দুকে। আমার প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজ দেখাশোনার কাজে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে ছোট ভাই (দেবর) মিরাজ।
আর আলাদা করে যার কথা বলতেই হয় তিনি হলেন আমার স্বামী। আমার সব কাজে সবসময় সাহস দিয়েছেন তিনি। আমার ওপর উনার বিশ্বাস ছিল বলেই হয়ত কাজের প্রতি নিজের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গেছিল। পাশাপাশি আমার মা আমাকে অনেক কাজে সাহায্য করেছেন। তার থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি।
ব্যবসাক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের অনলাইন গ্রুপ ‘উদ্যোক্তা মেলা’র কথা উল্লেখ করে সাফিনাজ জানান, ব্যবসা করার মূল মন্ত্র তিনি এই গ্রুপ থেকে শিখেছেন। গ্রুপের অ্যাডমিন প্যানেলের নিশির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিশি আপু আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন। আমি যখনই কোনো সমস্যায় পড়েছি, নিশি আপু আমাকে সমাধান দিয়েছেন।
তিনি বলেন, রান্না করতে গেলে কোনো ঝামেলায় পড়লে খালামণিকে কল দেই। তিনি খুব সুন্দর সমাধান দেন। তিনিও খাবার নিয়ে কাজ করছেন। এভাবে পরিবার ও আশেপাশের মানুষের সাহায্য, সাহস আর ভালোবাসায় এগিয়ে যাচ্ছে ‘দি সাফিনাজ কিচেন’।
নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে সাফিনাজ বলেন, কোনো কাজকে ছোট করে না দেখে, যে কোনো কাজকে ভালোবেসে ও গুরুত্ব দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে। কাজের গুনগত মান ঠিক রাখতে হবে। অবশ্যই ক্রেতার সন্তুষ্টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা ক্রেতাই হচ্ছে ব্যবসার মূল চাবিকাঠি।
নিজের কাজের মাধ্যমে ‘দি সাফিনাজ কিচেন’কে অনেক দূর নিয়ে যেতে চান সাফিনাজ। তার কাজই একদিন তার পরিচয় হবে- এমন স্বপ্ন দেখেন। আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নেই প্রতিনিয়ত খেটে যাচ্ছেন এই নারী উদ্যোক্তা। তার স্বপ্ন বাস্তবতা হয়ে ধরা দিক কাজের মাধ্যমে- এই কামনায় শেষ করলাম আড্ডা।
ওডি/নিমি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: inbox.odhikar@gmail.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড