• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কুবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসতে চান বয়স্ক, অছাত্র, ব্যবসায়ী!

  কুবি প্রতিনিধি

০৭ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:৪৩
কুবি

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করতে এবং সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধি করতে আগামী ৯ অক্টোবর (সোমবার) কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীসভা আহ্বান করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সম্মেলনকে সামনে রেখে নতুন কমিটির শীর্ষ দুই পদে আসতে তৎপর রয়েছেন শাখাটির প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা।

এরইমধ্যে গত ৫ই অক্টোবর সুষ্ঠুভাবে কর্মীসভা আয়োজনের লক্ষ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় সভাও করেছেন। এতে অংশগ্রহণ করেন প্রায় অর্ধশত পদপ্রার্থী। সভাপতি-সম্পাদক পদে আসতে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের দারস্থ হচ্ছেন অনেকে। তবে খোঁজে নিয়ে দেখা যায়, মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরলেও অবমূল্যায়িত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন অনেকে।

কারণ শীর্ষ দুই পদে আসতে যারা তৎপর রয়েছেন তাদের মধ্যে অছাত্র, বয়স্ক, বিভিন্ন মামলার আসামি, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্তরা। এদের মধ্যে আবার অনেকেই ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উইকেন্ড কোর্সে ভর্তি আছেন।

শীর্ষ পদে আসতে তৎপর ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইকবাল হোসাইন খান, তিনি ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী। তবে শাখা ছাত্রলীগের কোন পর্যায়ের কর্মী বা সমর্থক ছিলেন না এবং কোনো ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সংযুক্ত ছিলেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বাসা শিবিরের রাজনীতির কেন্দ্রস্থল ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও গত ১ অক্টোবর তার নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের মোটরবাইক শোডাউন ও বঙ্গবন্ধু হলে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

পদপ্রত্যশীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কাজী নজরুল ইসলাম হলের সভাপতি নাজমুল হাসান পলাশ, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ ও নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলের সভাপতি ইসরাত জাহান জেরিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারারাতবির হোসেন পাপন মিয়াজি, ২০১৭ সালে বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-এলাহী, সাবেক সহসভাপতি মেহেদী হৃদয়, কাজী নজরুল ইসলাম হলের সাবেক সভাপতি ইমরান হোসেন, কুবি শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদেৎ মোহাম্মদ সায়েম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমাম হোসেন মাসুম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রকিবুল হাসান রকি, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাউল হক শান্ত, ইকবাল খান, মুমিন শুভসহ প্রায় অর্ধশত নেতা।

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া ছাত্রলীগ দেশের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে ছায়া হয়ে ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে। আমি মনে করি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আতুড়ঘর। ভৌগোলিক অবস্থানের কারনে নির্বাচনে সংগঠনের এই ইউনিট বৃহৎ ভূমিকা রাখতে পারে। কাজেই বঙ্গবন্ধু তনয়ার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে আমি চাই যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসুক। আমি বিশ্বাস করি, আদর্শের জায়গায় থেকে একজন ছাত্রনেতাকে ন্যায়নীতিবান হতে হয়। তবেই শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রলীগের ইমেজ বৃদ্ধি পাবে। আমি চাইব কুবিতে তেমনি নেতৃত্ব আসুক। আপনারা জানেন আমি বহুবার বিএনপি জামাতের ষড়যন্ত্র রুখতে গিয়ে রাজপথে আহত হয়েছি। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গেলে এসব ত্যাগ তুচ্ছ। ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সহযোদ্ধা হয়ে থাকতে চাই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারারাতবির হোসেন পাপন মিয়াজি বলেন, ছাত্রলীগ দেশ গড়ার কারিগর৷ দীর্ঘ সময় সংগঠনের জন্য শ্রম ঘাম ঝরিয়েছি। শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে যোগ্য নেতৃত্ব দরকার। কিন্তু যখন দেখতে পাই বয়স ৩০ বছরের বেশি, বিভিন্ন মামলার আসামি এবং বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত কেউ টাকার গরম দেখিয়ে নেতৃত্বে আসতে চায়। তখন আমরা হতাশাগ্রস্ত হই। ছাত্রলীগ তারুণ্যের সংগঠন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে নেতা নির্বাচন করবেন। কারন আমাদের মতো তরুণেরা হতাশ হলে কর্মী সংকটে ভুগবে ছাত্রলীগ।

পদপ্রার্থী আরেক নেতা রেজা ই এলাহি। যিনি ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি হয়ে ২০১৬ সালে স্নাতক পাশ করে বেরিয়ে যান। ২০১৭ সালে বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন রেজা-ই-এলাহী। শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ অনুযায়ী তাঁর বয়স বর্তমানে ৩১ বছর। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৮ মার্চ বরুড়ার তালুকপাড়া গ্রামের ফাতেমা বেগম (৩১) নামের এক নারীকে ধর্ষণ চেষ্টা, ভাঙচুর, জালিয়াতি ও লুটতরাজের একটি মামলা কুমিল্লার বিজ্ঞ নারী ও শিশু দমন বিশেষ ট্রাইবুনাল-০২ এ ছিল যা পরবর্তীতে বাদী মিমাংসা করে নেয়। যেখানে তিনি ১ নম্বর আসামী ছিলেন।

আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলায় তিনি এজাহারভুক্ত আসামী।

তিনি বলেন, আমার ছাত্রত্ব বা বয়স আছে কি নেই এটা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বিবেচনা করবে। কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা অবশ্যই যোগ্যদেরকে বিবেচনা করবে। নেতৃত্বে আসতে পারলে সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিতে পাশে থাকবো। এছাড়াও ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ যাতে সুষ্ঠু থাকে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করবো।

কর্মীসভার সমন্বয়ক কোহিনূর আকতার রাখি বলেন, কর্মীসভার পরেই আমরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি নিয়ে ভাববো। কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা গঠনতন্ত্র মেনে নিয়মিত ছাত্র ও যোগ্যদেরকে বিবেচনা করব। কেউ যদি কর্মীসভায় বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা নেতাকর্মীদেরকে ডেকে বলেছি যাতে তারা কর্মীসভা সফল করতে সবাই মিলেমিশে কাজ করেন।

আরেক পদপ্রার্থী ফয়সল। যিনি একটি কলেজ থেকে ডিগ্রি শেষ করেছেন। বর্তমানে তিনি ব্যবসা করছেন।ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি আছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কোথাও নেই যে সান্ধ্যকালীন কোর্সের কেউ কমিটিতে আসতে পারবে না। যেহেতু আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থী সেহেতু আমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। আমি দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত থেকে শ্রম দিয়েছি ও ত্যাগ স্বীকার করেছি। আমি নেতৃত্বে আসতে পারলে প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করব এবং শিক্ষার মানোন্নয়ন করার চেষ্টা করব। তাদের দাবি আদায়ের জন্য আমি কাজ করব। হলে খাবারের মান বৃদ্ধির জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা করব।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৩ মে বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২৮ মে ইলিয়াস হোসেন সবুজকে সভাপতি ও রেজাউল ইসলাম মাজেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরে গত ৬ মার্চ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির প্রায় সাড়ে ৭ মাস পর কর্মীসভা আহ্বান করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.odhikar@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: inbox.odhikar@gmail.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড