• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে নিলাশের ভিন্নধর্মী উদ্যোগ 

  কুবি প্রতিনিধি

১৯ জুলাই ২০২৩, ১৪:০৪
আত্মকর্মসংস্থান তৈরিতে নিলাশের ভিন্নধর্মী উদ্যোগ 

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে চায়ের কাপে জমে ওঠা বন্ধুদের আড্ডায় মত্ত হতে কার আবেগ স্পর্শ করেনা! যুগের পর যুগ সোনালী এই অধ্যায়কে নিয়ে কত গল্প আর কবিতা রচিত হয়েছে। বিরচিত হয়েছিল যুগান্তকারী সেই 'কফিহাউজ' গান। জীবনের একটি স্তরে শিক্ষার্থীরা এখানে কাটানো সময়ের স্মৃতিচারণ করে বেড়ায়। তবে যদিও এর ব্যতিক্রম হয়ে থাকে! এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ৩য় বর্ষে পড়ুয়া চট্টগ্রামের সন্তান নিলাশ ধর।

অবসরে সহপাঠীদের কেউ টিউশন, খেলাধুলা কিংবা গিটারের টুংটাং শব্দে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বন্ধুদের সাথে গল্পে মত্ত থাকেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের পাশেই দেখা যায় নিজের স্বপ্ন পূরণে ব্যস্ত একটি ছেলেকে। নিত্যদিনের ক্লাস, এসাইনমেন্ট, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা সামলে বাকি সময়ে নিজের গড়ে তোলা "গ্রাজুয়েট ফুড কর্নারে" এই সময়টায় ব্যস্ত পার করেন তিনি।

হাতে গ্লাবস মাথায় হাইজিন ক্যাপ পরে চটপটি কখনো ফুচকা কিংবা দই ফুচকা সহ নানারকম মুখরোচক খাবার বিক্রি করেন। ইতোমধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে পেয়েছেন ভালোবাসা। মানসম্মত খাবার বিক্রি করায় শিক্ষার্থীরাও স্বাচ্ছন্দ্যে আসেন নিলাশের দোকানে।

নিলাশ শুরুতে তার দোকানে একাই কাজ করতেন। বর্তমানে তার খাবারের চাহিদা থাকার কারণে সহযোগী হিসেবে রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থীকে। শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় নিলাশের এই ভিন্নধর্মী চিন্তা ও উদ্যোক্তা হয়ে উঠাকে বাহবা দিচ্ছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, তার এই উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা বেকার বসে থেকে ডিপ্রেশনে চলে যায়। কখনো তারা মাদকাসক্ত কিংবা বিভিন্ন অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু নিলাশ খুব প্রশংসনীয় কাজ করছে। এছাড়াও তার খাবারের মান, পরিচ্ছন্নতা ও অভিনব পরিবেশনা আমাদের মুগ্ধ করেছে।

সহপাঠী সাইদুল ইসলাম বলেন, সে নিজের পড়াশোনা শেষ করে বাড়তি সময়টুকু নষ্ট না করে আত্মনির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। একজন সহপাঠী হিসেবে আমি নিলাশের এই উদ্যোগকে সম্মান জানাই। আমরা সবাই ওর পাশে আছি এবং থাকবো। আর যদি খাবারের কথা বলি, সহপাঠী হিসেবে নয় একজন কাস্টমার হিসেবে আমি স্যাটিসফাইড। ওর দোকানের খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই বলে আমি মনে করি।

প্রেমী নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য আরেক শিক্ষার্থী তার মাকে নিয়ে আসেন ফুচকা খেতে। তার মা বলেছেন, যদিও একজন বয়স্ক মানুষ হিসেবে ফুচকার প্রতি আমার আকর্ষণ কম কিন্তু এখানকার ফুচকা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। তাছাড়া সে সময় নষ্ট না করে এখানে নিজের ব্যবসা দাঁড় করাচ্ছে। এই উদ্যোগটি আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।

নিলাশ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণে অনেক সময় আমাদের মাঝে অহংকার কাজ করে। অনেক কাজকে সমাজে ছোট করে দেখা হয়। আমি চাই এই অহংকার যেন না থাকে। এছাড়াও পড়াশোনা শেষ করে অনেক শিক্ষার্থী চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যা করেন। অথচ চাইলেই তারা আত্মনির্ভরশীল হয়ে যে কোনো কাজ করে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারেন। অর্থাৎ চিন্তার পরিবর্তন ঘটাতেই আমার এই উদ্যোগ।

তিনি আরও বলেন, গত এক মাসের পথ চলায় আমাকে আমার সহপাঠী, বন্ধু ও শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। বিশেষকরে উপাচার্য স্যার ও প্রক্টরিয়াল বডি যদি সর্বোচ্চ সাহায্য না করতো তাহলে আমি এখনে আসতে পারতাম না।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে নিলাশ আরও বলেন, আমার স্বপ্ন হচ্ছে দুইটি। প্রথমত, আমি চাই আগামী দশ বছরের মধ্যে কমপক্ষে এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে সাহায্য করা এবং অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষা অর্জনে সহযোগিতা করা। দ্বিতীয়ত, আমি পুলিশ অফিসার হতে চাই এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি পড়াশোনা করছি।

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নিলাশের শিক্ষক কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, কোনো শিক্ষার্থী অন্যের কাছে না গিয়ে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার উদ্দেশ্যে এমন উদ্যোগ নেওয়াটা একজন শিক্ষক হিসেবে আমি অবশ্যই প্রশংসা করি। তাছাড়া আমি মনে করি, এখান থেকে পরবর্তী জীবনের জন্য সে অনেক বাস্তব ধর্মী জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।

আপনার ক্যাম্পাসের নানা ঘটনা, আয়োজন/ অসন্তোষ সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.odhikar@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: inbox.odhikar@gmail.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড