• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন

  সম্পাদকীয়

২৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:২৪
সম্পাদকীয়

প্রায় এক দশক পর সরকার ২ হাজার ৭৩০টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। এ নিয়ে সারা দেশে সব মিলিয়ে প্রায় ২৯ হাজারের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির আওতায় আনা হলো।

এমপিও এর পূর্ণরূপ হলো মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ যে অর্থ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত হয়, সেটিকেই ইংরেজিতে বলা হয় মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার বা এমপিও।

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন পান সরকারি স্কেলে। সে হিসাবে একজন প্রধান শিক্ষকের বেতন দাঁড়ায় ২৯ হাজার টাকা। আর একজন সাধারণ শিক্ষকের বেতন আসে ১৬ হাজারের মতো। এর বাইরে তারা বাড়িভাড়া হিসেবে এক হাজার টাকা এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পেয়ে থাকেন। পাশাপাশি ঈদ উৎসব ভাতা হিসেবে শিক্ষকেরা পান বেতনের ২৫ শতাংশ এবং কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এটি বেতনের ৫০ শতাংশ। পহেলা বৈশাখেও একই পরিমাণে উৎসব ভাতা দেয়া হয়ে থাকে।

এমপিওভুক্ত হতে গেলে প্রাথমিক শর্ত হিসেবে কলেজ পর্যায়ে অন্তত ৬০ জন পরীক্ষার্থী থাকতে হয়; আর মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে তা ৪০ জন। এছাড়া যারা পরীক্ষা দিচ্ছেন তাদের মধ্যে পাশের হারেও যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয়। স্কুল ও কলেজের ক্ষেত্রে এ হার ৭০; মাদ্রাসার জন্য তা ৬০ শতাংশ। সুতরাং বলা যেতে পারে, এমপিওভুক্তি হচ্ছে এক অর্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যোগ্যতার মাপকাঠিতে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত পুরস্কার।

দেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার নিম্নমানের কারণ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই আর্থিক ব্যাপারটিকে প্রধানরূপে দায়ী করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের বদলে স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের কোচিং-বাণিজ্যে উৎসাহী হবারও অন্যতম কারণ হচ্ছে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তার অভাব। এমন প্রেক্ষাপটে ২০১০ সালে সর্বশেষ এমপিওভুক্তির পর থেকেই থেমে থেমে আন্দোলন করে আসছিলেন এমপিওভুক্ত নয় এমন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা।

এমপিওভুক্তির নতুন নীতিমালা বাতিল করে পুরনো নিয়মে স্বীকৃতি পাওয়া সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির দাবিতে এ আন্দোলন চলেছে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত। অবশেষে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তাঁরা কর্মসূচি স্থগিত করেন। সভ্য সমাজে নিজেদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে শিক্ষকদের আন্দোলনে অবতীর্ণ হবার ঘটনা নিঃসন্দেহে অপ্রত্যাশিত। এ পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সরকার এসব বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছে বলেই মনে হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এমপিও সুবিধা হিসেবে এক হাজার কোটি টাকার মতো বরাদ্দ রেখেছে। আগের বছর যা ছিল এর অর্ধেক।

তবে এমপিওভুক্তির পরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার মান উন্নত করার ব্যাপারে কতটা প্রতিশ্রুতিশীল সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। কেননা অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এমপিওভুক্তির পরেও শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে কোনো গুণগত উন্নতি দেখাতে পারে না। তাই এমপিওভুক্তির পরে সরকারের অর্থ শিক্ষার মানোন্নয়নে যথাযথভাবে কাজে লাগছে কি-না সে বিষয়ে কঠোর তদারকি প্রয়োজন।

ইতোপূর্বে এগুলোকে খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা না হলেও এবারের এমপিওভুক্তির ঘোষণার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী উভয়ের কথাতেই একটি বিষয় পরিষ্কার যে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে। তাছাড়া এখন থেকে প্রতিবছরই যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার কথাও বলা হচ্ছে। সেই সাথে এমপিওভুক্তির জন্য যেসব শর্ত রয়েছে, পরে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান সেগুলো পূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে সে প্রতিষ্ঠানের এমপিও স্থগিত করা কথাও শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে এসেছে।

শিক্ষার মানোন্নয়নে যে ধরনের তদারকির কথা বলা হচ্ছে, তা যদি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়, তবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রকৃত সুফল পাওয়া যাবে। পাশাপাশি, শিক্ষকেরা কোচিং-বাণিজ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে ক্লাসে মনোযোগী হচ্ছেন কি-না, সেদিকেও নজরদারি বাড়াতে হবে। অন্যথায় খাজনার চাইতে বাজনা বেশি হয়ে যাবার সম্ভাবনা থেকে যায়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: inbox.odhikar@gmail.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড