সাগর মিয়া, হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)
'রোদ-বৃষ্টিতে করে চাষ মাথালও মাথায়,
এ যে মোদের খাঁটি মানুষ সোনার কৃষক ভাই।'
কবিতার এ পঙক্তিদ্বয়ের দেশীয় ঐতিহ্য মাথাল আজ কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। বর্তমানে হাওর অঞ্চলে কিছুটা লক্ষ্য করা গেলেও হোসেনপুর উপজেলায় এর ব্যবহার নেই বললেই চলে।
বাংলার কৃষি, কৃষক আর মাথাল যেন এক সূত্রে বাঁধা। সনাতন প্রথার কৃষিকাজে কৃষকের এক অপরিহার্য কৃষি উপকরণ হলো মাথাল। রোদ-বৃষ্টিতে কৃষকদের সারাদিন মাঠে কাজ করতে হয়। মাঠে সাধারণত কোনো আশ্রয় বা ছায়া দেয়া গাছ থাকে না। কৃষকদের কাজ করতে হয় দু’হাতে। তাই ছাতা হাতে ধরে ক্ষেতে কাজ করা সম্ভব নয়। সে জন্য প্রাচীনকাল থেকেই কৃষকরা নিজস্ব কলাকৌশলে ছাতার মতো একটি উপকরণ তৈরি করে নিয়েছে, যার নাম মাথাল বা মাতলা।
জানা যায়, মাথাকে রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচানোর জন্য এটি ব্যবহার হয় বলে এর নাম মাথাল। প্রাচীনকালে ছাতার ব্যবহার ছিল না। তাই তখন বর্ষাবাদলের দিনে গ্রামীণ লোকেরা মাথাল ব্যবহার করত।
এমনকি শূকর চারণকারী টাওরা সম্প্রদায়ের লোকেরাও শূকরের পাল চরানোর সময় ঢাউস আকারের বৃহৎ মাথাল ব্যবহার করে। মাথালের মাঝখানটা পিরামিড বা শম্বুকাকার। এ অংশটি মাথার মধ্যে বসে যায়। এর চারধারে বৃত্তাকারে থাকে ছাঁট বা কার্নিশ- অনেকটা ঘরের বারান্দার চালের মতো।
মাথালকে মাথার সাথে শক্তভাবে এঁটে রাখার জন্য রশি থাকে দু’পাশ থেকে। মুখের নিচে থুতনির সাথে তা বেঁধে দেয়া হয়। মাথাল পানি প্রতিরোধী হওয়ায় তা পরে বর্ষার দিনেও কৃষকরা মাঠে স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারে। শুধু কৃষিকাজে নয়, মাথাল গম্ভীরা গানের শিল্পীদেরও এক গুরুত্বপূর্ণ সাজ উপকরণ।
বরগুনা ও পটুয়াখালীর কৃষকরা হোগলা পাতা দিয়ে বানানো অন্য আর এক ধরনের মাথাল ব্যবহার করে। বর্ষাকালে সেটি ব্যবহার হয়। তাকে বলে ‘জোংড়া’। এটি শুধু মাথা নয়, পিঠও বর্ষার হাত থেকে রক্ষা করে।
কৃষক সায়াম উদ্দিন জানান, আগে পাতলা ব্যবহার হতো অনেক বেশি কারণ সারাক্ষণ রোদ বৃষ্টিতে কাজ করলে এর বিকল্প ছিল না। বর্তমানে কৃষকরা রোদ-বৃষ্টিতে সারাক্ষণ কাজ কমই করে, মেশিনে চাষ করার ফলে এটা ব্যবহার করতে হয় না। স্প্রে দ্বারা ঘাস নিধনের ফলে খেত নিড়াতে হয় না।
কৃষক সূতি মিয়া জানান, এখন কৃষকরা পাট, মরিচ, কলাই, আউস ধান, সরিষা ইত্যাদি ফসল কম চাষ করে যার জন্য সারাদিন একটানা কাজ করতে হয় না তাই মাথালের ব্যবহারও কম।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: inbox.odhikar@gmail.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড