এম. কামাল উদ্দিন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার (রাঙামাটি)
রাঙামাটিতে তীব্র দাবদাহের মধ্যেই অসহনীয় বিদ্যুৎ বিভ্রাট আর লোডশেডিংয়ে জনদুর্ভোগ এখন চরমে। বিপর্যস্ত জনজীবন। লোডশেডিংয়ে শহরজুড়ে ঘণ্টার ঘণ্টা বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করে। এতে মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। এতে ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায়। হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসাসেবা হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বর্তমানে জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে পালাক্রমে এলাকাভিত্তিক নির্ধারিত সময় বন্ধ রেখে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখতে হচ্ছে।
দেখা যায়, বর্তমানে রাঙামাটিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব মিলিয়ে ৫/৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ মেলে না। লোডশেডিং তো রয়েছে, সেই সঙ্গে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়া, তার ছিঁড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন ত্রুটিতে ঘটছে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট। ঘণ্টায় ঘণ্টায় একের পর এক লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে রাতদিন লাগাতার।
লোডশেডিং রাতে অন্ধকারে ডুবে থাকছে রাঙামাটি শহরের এলাকাজুড়ে। মার্চ থেকে শুরু হওয়া লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন রাঙামাটিবাসী। জনজীবনে বিরাজ করছে স্থবিরতা। এক দিকে যেমন মানুষের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে, তেমনি ক্ষতির সম্মুখীন বিদ্যুৎ নির্ভর ব্যবসায়ীরা।
শহরের রিজার্ভ বাজারের লন্ড্রি ব্যবসায়ী শম্ভু দে বলেন, আমাদের লন্ড্রি ব্যবসা পুরোটাই বিদ্যুৎ নির্ভর। কাপড় আয়রন বা ধোয়ার কাজ করতে হয় সম্পূর্ণ মেশিনে। কিন্তু সেগুলো বিদ্যুৎ ছাড়া অচল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করায় কাজ করা দুরূহ হয়ে উঠেছে। দিনে বিদ্যুৎ থাকে না বলে রাতে কাজ করার চেষ্টা করি। কিন্তু রাতেও লোডশেডিংয়ের একই অবস্থা।
শহরের একই এলাকার শান্তি ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং শপের কর্মচারী সুভাষ দে বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে এখন আমরা কাজ করতে পারছি না। সকালে দোকান খোলার পর থেকেই যেভাবে বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করে, তাতে আমরা কাজের অর্ডারগুলো ঠিক সময়ে ডেলিভারি দিতে পারছি না। আমরা ব্যবসায়িকভাবে খুব ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।
রাঙামাটি সদরের বিহারপুর এলাকার শুভাগত চাকমা বলেন, শহরের মূল জনবহুল এলাকাগুলোতে মোটামুটি বিদ্যুৎ থাকলেও আমাদের গ্রাম এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ থাকে না বললেই চলে। একে তো প্রচণ্ড গরম, তার ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। এভাবে স্বাভাবিক জীবন একেবারে বিপর্যস্ত।
সদরের ভালেদি এলাকার বর্ণা চাকমা বলেন, আমাদের বাসায় ছোট বাচ্চা আছে। যেভাবে সারাদিন বিদ্যুৎ থাকে না- এতে বাচ্চাদের সুস্থ রাখা খুব কষ্টকর হয়ে উঠছে।
উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থী প্রথমা চাকমা বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ভর্তি পরীক্ষার পড়াশোনায় অসহনীয় ভোগান্তিতে ভুগতে হয়েছে।
রাঙামাটি সদর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী বাবু ত্রিপুরা বলেন, প্রায় সময় বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ চলে গেলে আসতে সময় লাগে দীর্ঘক্ষণ। আসলেও আবার কিছুক্ষণ পরেই চলে যায়। এতে আমাদের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে।
রাঙামাটি সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) শওকত আকবর বলেন, সারাক্ষণ বিদ্যুৎ যাওয়া-আসার কারণে রোগিদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
রাঙামাটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান বলেন, বর্তমানে রাঙামাটিতে চাহিদার তুলনায় খুব কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এটাই বর্তমান বিদ্যুৎ পরিস্থিতির মূল কারণ। পুরো রাঙামাটির জন্য আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ মেগাওয়াট। কিন্তু বর্তমানে আমরা জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছি ৪ থেকে ৭ মেগাওয়াট। ফলে এলাকাভিত্তিক বন্ধ রেখে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ না পেলে আমরা সরবারহ করতে করতে পারি না। বর্তমানে প্রতি ফিডে ৫-৬ বার করে লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় পর্যায় থেকে চাহিদার বিদ্যুৎ সরবারহ পর্যাপ্ত করা না হওয়া পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ করা সম্ভব হবে না।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: inbox.odhikar@gmail.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড