মাজেদুল ইসলাম হৃদয়, ঠাকুরগাঁও
আপনারা খালি আমাদের ভিডিয়ো করে নিয়ে যান; কিন্তু তাতে আমাদের কৃষকদের কোনো লাভ হয় না। সরকার বলছে সারের কোনো ঘাটতি নাই কিন্তু বাজারে তাদের নির্ধারিত দামে ঠিক মতো কোনো সার পাওয়া যাচ্ছে না। গেলেও দাম দিতে হচ্ছে দ্বিগুণ। আলু রোপণের সময় ও এখন চাইনা ধান করার সময়েও ঋণ করে ইউরিয়া ১২’শ, টিএসপি ১৭’শ ও পটাশ (এমওপি) ১৬’শ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে।
সরকার যদি আমাদের দিকে না দেখে তাহলে আমরা কৃষক মাঠে মারা যাব। সরকার চাকুরিজীবীদের বেতন ঠিকি বাড়াচ্ছে কিন্তু কৃষকদের খোঁজ করে দেখে না। আপনারা এভাবে আমাদের ভিডিয়ো করে নিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু আমাদের ভিডিয়োর কোনো কাজই হয় না। এভাবেই আক্ষেপ করে সাংবাদিকদের জানাচ্ছিলেন সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের ষাট ঊর্ধ্ব কৃষক আব্দুল কুদ্দুস।
কৃষি প্রধান বাংলাদেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে বোরো আবাদে জ্বালানি তেল ও রাসায়নিক সারের কৃত্রিম সংকট এবং দাম বৃদ্ধিতে জেলার কৃষকদের নাভিশ্বাস। সার ও ডিজেলের দামের কারণে বোরো চাষে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। কৃষকদের অভিযোগ সারের কৃত্রিম দাম ও সংকট রোধ না করলে তারা এভাবে মাঠে মারা যাবে।
চলতি বোরো রোপণ মৌসুমে দেখা যায়, জেলার কৃষকরা বোরো ধান রোপণে জমিতে সেচ, চাষ, মাটি সমান ও পানি ধরে রাখেতে জমির আইল বাঁধা এবং চারা উত্তোলন করে রোপণ কাজে চরম ঘাম ঝরা পরিশ্রমে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। কিন্তু বর্তমান দ্রব্যমূল্যের আগুন দামে ডিজেল ও সারের কৃত্রিম সংকটে ও দাম বৃদ্ধির কারণে ধান উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় হাউহুতাশ খাচ্ছেন তারা।
জেলায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমি। যার ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ২ লক্ষ ৬৭ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন। আর এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে ধান রোপণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি জমিগুলোতে আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যেই রোপণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক (শস্য) আলমগীর কবিরের দেওয়া তথ্য মতে, গত বছর বোরো ধানের ক্রয় মূল্য ছিল ২৬ টাকা কেজি। সেই হিসেবে ২ লক্ষ ৬৭ হাজার ৯৪০ মেট্রিক টন ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৬৯৬ কোটি টাকার ধান উৎপাদন হবে ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে।
লক্ষ্মীপুর গ্রামের ষাট ঊর্ধ্ব আরেক কৃষক বাবলু বলেন, ডিজেল ও সার-বিষের দামের জন্য আমরা ক্ষেতের ঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারছি না। টাকার অভাবে এতো দামে আমরা তেল, সার-বিষ কিনে কৃষি করতে হিমশিম খাচ্ছি। আর আমরা যদি কৃষি করতে না পারি তাহলে যারা চাকরি করেন তারা তো আর সবাই কৃষি করেন না। তাহলে তারা কি খাবেন? সরকার যদি এসবের দাম একটু কমায় তাহলে আমাদের কৃষকদের খুব উপকার হবে। আর যদি এবিষয়ে কোন পদক্ষেপ না নেন তাহলে আমাদের পক্ষে এভাবে কৃষি করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের হঠাৎপাড়া গ্রামের ইব্রাহীম বলেন, ডিজেল প্রতিলিটার ১১৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এভাবে কৃষি করে তাদের টিকে থাকা মুশকিল। তাই সরকারকে ডিজেল ও সারের দাম কমানোর বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে কৃষকদের দিকে নজর দেওয়া উচিত।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অনুযায়ী ধানের ন্যায্যমূল্যের শঙ্কা করে গড়েয়া ইউনিয়নের ঢাংগী পুকুর গ্রামের আলহাজ্ব গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি ১০ একর জমিতে এবার বোরো আবাদ করেছি। কিন্তু বর্তমানে কৃষি পণ্যের যে দাম তাতে ৫০ শতকের প্রতি বিঘা জমিতে বোরো আবাদে ২৬ হাজার টাকা খরচ পড়ছে। যদি ধানের মণ ১৫০০ টাকা থাকে তাহলে হয়তো আমরা একটু লাভবান হব।
অন্য দিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম সারের কোনো ঘাটতি নেই বলে উল্লেখ করে বলেন, জেলায় চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণে সার মজুদ আছে ও সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কেউ বেশি দামে সার বিক্রয় করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং এ বিষয়ে আমাদের মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত আছে ও থাকবে। এছাড়াও বোরো ধান আবাদে কৃষকদের আমরা সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: inbox.odhikar@gmail.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড