আবিদ মাহমুদ, রাউজান (চট্টগ্রাম)
হালদাপারের মৎস্যজীবী ষাটোর্ধ্ব হরিপদ দাস (ছদ্মনাম)। দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদী থেকে প্রতিদিন মাছ ধরে জীবিকা চলে তার। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হওয়ায় আতঙ্ক নিয়ে মাছ ধরেন। আরও অনেকের সঙ্গে মিলে সারাদিন মাছ ধরেও জীবিকা চালানো কঠিন হয়ে উঠেছে তার।
একই অবস্থা হালদাপাড়ের দুই শতাধিক মৎস্যজীবীর। হালদার জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি তুলেছেন এসব জেলে।হালদা নদীর অভিজ্ঞ ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর। তিনি বলেন, বর্তমানে যারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের তালিকা প্রণয়ন করে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা গেলে নদীতে অবৈধ জালপাতা বন্ধ হবে। রক্ষা পাবে মা-মাছ ও ডলফিন।রাউজান পৌরসভার বাসিন্দা জেলে পরিবারের নারী সদস্য নিলু আকতার জানান, তার স্বামী হাসান হালদায় জাল বসাতেন। এখন জাল দিলে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাই সস্তা দামে জাল বেচে দিয়েছি। এখন অভাব-অনটনে দিন। প্রবীণ জেলে হরেন্দ্র দাস বলেন, বাবার সঙ্গে নদীতে মাছ ধরতে যেতাম। বাপ-দাদার এই পেশায় জীবন- যৌবন সবই শেষ করলাম। আমাদের নতুন প্রজন্ম এখন আর এই পেশায় নেই। যারা আছেন তারা নদীতে নামতে পারেন না নিষেধাজ্ঞার কারণে।
রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পীযূষ প্রভাকর জানান, ২০১৪-১৫ সালের জরিপ অনুযায়ী হালদা নদীর রাউজান অংশে মৎস্যজীবীর সংখ্যা ১ হাজার ৪১০। ২০০৯ সালের পর থেকে মাছ ধরা বন্ধ। তাই বর্তমানে হালদা থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী জেলেদের নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই।
তিনি বলেন, নদী থেকে যারা অবৈধভাবে জাল পেতে বা কীটনাশক প্রয়োগ করে মাছ ধরছেন তারা নদী পাড়ের বাসিন্দা, তাদের অন্য পেশা আছে। কেউ দোকানদার, কেউ দিনমজুর, আবার কেউ গাড়ি চালক। শুধুমাত্র কচুখাইন থেকে যারা মাছ ধরে, তারাই হালদা নির্ভরশীল জেলে ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন নদীতে অতিবিপন্ন প্রজাতির ডলফিন আছে মাত্র ১ হাজার ১০০টি। এর মধ্যে শুধু হালদাতেই ছিল ১৭০টি। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৯টি ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে। জেলেদের জালে আটকে পড়া ছাড়াও চর্বি চুরির জন্য হত্যা, আঘাতজনিত কারণেও ডলফিনের মৃত্যু হচ্ছে। প্রত্যেক বছর লাখ লাখ মিটার অবৈধ জাল জব্দ করেছে প্রশাসন। তার পরও জাল পাতা বন্ধ হচ্ছে না।
হালদা বিশেষজ্ঞ ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, আমরা সরকারকে বারবার বিকল্প কর্মসংস্থানের কথা বলেছি। সরকার আমাদের আশ্বাস দিচ্ছে, পরবর্তী যে প্রকল্প আসবে, সে প্রকল্পের মধ্যে তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। হালদাপাড়ের জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের তালিকা প্রণয়নের কথা শুনলেই মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। যারা বর্তমানে অন্য পেশায় আছেন, তারা তালিকায় নাম তুলতে যান। যদি প্রকৃত তালিকা প্রণয়ন করা যেত, কম সংখ্যক জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সহজ।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: inbox.odhikar@gmail.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড