মো. আবুবকর মিল্টন, বাউফল (পটুয়াখালী)
বিদেশে যাওয়ার টাকা না পেয়ে বিয়ের দুই বছর পর স্ত্রীকে পটুয়াখালীর পতিতালয়ে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে পাষণ্ড স্বামীর বিরুদ্ধে। যে কারণে এরই মধ্যে অভিযুক্ত স্বামীর বিরুদ্ধে ডাক ফেরতযোগ্য লিগ্যাল নোটিশ করা হয়েছে।
গত বুধবার (৭ ডিসেম্বর) মো. শহিদুল আলম অ্যাডভোকেট জজ কোর্ট পটুয়াখালী মাধ্যমে মোসা. সাহিনুর বেগম বাদী হয়ে লিগ্যাল নোটিশ করেন। লিগ্যাল নোটিশে স্বামী মো. জাহিদ সরদার ও স্থানীয় ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন সুজনকে ১৫ দিনের মধ্যে স্ত্রীর মর্যাদা পাওয়ার জন্য লিগ্যাল নোটিশ করা হয়।
অভিযুক্ত স্বামী মো. জাহিদ সরদার চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন সুজন চন্দ্রমোহন ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের ভেদুরিয়া গ্রামের হাজী আ. রাজ্জাক মালের ছেলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৪ বছর আগে বরিশাল সদর উপজেলা ১০নং চন্দ্রমোহন ইউনিয়নে ভেদুরিয়া গ্রামের জ্বালাল সরদারের জাহিদের সঙ্গে তাদের বাড়িতে বসে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চরকাকটা গ্রামের মৃত্যু আলতাফ সরদারের মেয়ে মোসা. সাহিনুর বেগমের বিয়ে হয়।
বিয়ের পর স্বামী জাহিদ বিদেশে যাওয়ার কথা বলে যৌতুক হিসেবে ৫০ হাজার টাকা সাহিনুরের পরিবারের কাছে চাইতে থাকেন। সাহিনুর গরীব পরিবারের জন্ম নেওয়ায় যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় সাহিনুরের উপর শারীরিক নির্যাতন চালায় জাহিদ। পরবর্তীকালে স্ত্রীকে চিকিৎসার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে পটুয়াখালী পতিতালয়ের দালালের কাছে ২০ বছরের কন্টাকে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বিদেশ পারি দেন অভিযুক্ত জাহিদ। এর কয়েক বছর পরে জাহিদ দেশে ফিরলেও স্ত্রী থাকেন পটুয়াখালী পতিতালয়ে। এভাবেই তাদের ১৪ বছর কেটে যায়।
সম্প্রতি জাহিদ দেশে অবস্থান করছে বিষয়টি টের পেয়ে গত ৫ ডিসেম্বর সাহিনুর তার এক আত্মীয়কে নিয়ে জাহিদের বাড়ি উদ্দেশ্য বরিশাল সদর উপজেলা ১০নং চন্দ্রমোহন ইউনিয়ন পরিষদে যান। যাত্রা পথে পরিষদের ব্রিজের পাশে জাহিদের দোকান থাকায় জাহিদ সাহিনুরকে দেখে ফেলেন। এ সময় সাহিনুর পরিষদের দিকে যেতে চাইলে জাহিদ স্থানীয় ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন সুজনকে কল করে বিষয়টি জানালে ইউপি সদস্য স্থানীয় আইয়ুব আলীর হাওলাদারের ছেলে লিটন, মুজাম্মেল হাওলাদারের ছেলে সজিবসহ বকাটে রনি সাহিনুর ও তার আত্মীয়কে প্রথমে জাহিদের দোকানে নিয়ে আটকে মারধোর করেন। পরে ইউপি সদস্যর সহযোগিতায় ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে রুমে আটকিয়ে ফের তাদের উপর আবারও হামলা চালায় জাহিদ বাহিনী।
ভুক্তভোগী সাহিনুর বলেন, পরপর আমরা দুবার হামলার শিকার হয়েছি। এমনকি আমাদের সাথে থাকা টাকা পয়সা ও স্বর্ণ অলংকার নিয়ে যায় হামলাকারীরা
সাহিনুর আরও বলেন, আমরা হামলার শিকার হয়েছি স্থানীর চেয়ারম্যান বন্দর থানা পুলিশ সাংবাদিক সবাই জানেন। চেয়ারম্যান পুলিশের কাছে আমি জানাই, জাহিদ চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আমাকে অজ্ঞান করে পটুয়াখালী পতিতালয়ে বিক্রি করেন। আমি জাহিদের বাড়িতে ছিলাম তাদের ঘরের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে ভাই বোন আত্মীয়-স্বজন সবাইর নামসহ জাহিদের কোনো জায়গায় তীলা আছে তাও বলে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও আমার কোনো কথা বিশ্বাস করেনি তারা। আমি জাহিদ ও ইউপি সদস্যসহ হামলাকারীদের বিচার চাই।
ভুক্তভোগীর দাবি, আমি বুঝতে পেরেছি বরিশালে কোনো বিচার পাব না। এমনকি বরিশালে আমার আপন কেউ নেই; তাই পটুয়াখালী জজকোর্টের অ্যাডভোকেটের মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি এখন দেখি তারা কি করে! যদি আমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয় ভালো, তা না হলে আমি হামলাকারীদের কাউকে মামলা থেকে বাদ দিব না। এমনকি বাদ যাবে না ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও।
যদিও স্থানীয়রা বলছেন, জাহিদ বিয়ে করেছে ইউনিয়নের সবাই জানে। জাহিদ বৌকে মেরে পুকুর পারে রেখে দিত। বৌর নির্যাতনের ঘটনা সবাই জানে। সাহিনুরকে বাড়ি থেকে চিকিৎসার কথা বলে নিয়েছে। জাহিদ বাড়িতে এসে সবাইকে জানায় সাহিনুর অন্য পুরুষের সাথে চলে গেছে; তাই আমরা জানি।
অ্যাডভোকেট মো. শহিদুল আলম বলেন, আমি প্রথমে ১৫ দিনের মধ্যে সাহিনুরকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নেওয়ার জন্য জাহিদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ করেছি, তারা যদি মানতে না চায় পরবর্তীকালে আমরা কোর্টে মামলা করব।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: inbox.odhikar@gmail.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড