• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

চরফ্যাশনে গড়ে উঠেছে ২০টি অবৈধ ইটভাটা

নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের নজরদারি

  খলিল উদ্দিন ফরিদ, ভোলা

০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:১৬
চরফ্যাশনে গড়ে উঠেছে ২০টি অবৈধ ইটভাটা
অবৈধ ইটভাটা (ছবি : অধিকার)

ভোলার চরফ্যাশনে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বা অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে প্রায় ২০টি অবৈধ ইটভাটা। অসাধু ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় পরিচালিত হচ্ছে এসব ইটভাটা। শুধুমাত্র ড্রামসিটের চিমনি দাড় করিয়ে বনের কাঠ উজাড় করে ফসলি জমির মাটি ও ভাটা সংলগ্ন সরকারী খালের মাটি দিয়ে এ ভাটাগুলোতে ইট পোড়াচ্ছে অবৈধ ইট ব্যবসায়ীরা।

পরিবেশ ধ্বংস করে এমন অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করায় প্রশাসনের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

চরফ্যাশন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা দক্ষিণ আইচার মানিকা, হাজারীগঞ্জ, চরকলমী, আবদুল্লাহপুর, রসুলপুর, নীলকোমল, ঘোষের হাটসহ আবদুল্লাহপুর, এওয়াজপুর, আসলামপুর, বেতুয়া ও মাদ্রাজ ইউনিয়নে রয়েছে এ অবৈধ ভাটাগুলো।

ভাটাগুলোতে রয়েছে গাছ কাটার স্ব-মিল। এই স্ব-মিলে হাজার, হাজার মন লাকড়ি ও গাছের গুড়ি কেটে ইট পোড়ানোর কার্যক্রম চলছে।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলছেন, ফসলী জমিতে অবৈধভাবে ড্রামসিটের তৈরি চিমনি ব্যবহার করে লাকড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। যার ফলে এলাকার নারী ও শিশুসহ আবাল বৃদ্ধরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে।

অবৈধ ভাটার কালো ধোয়ার কারণে ভাটা সংলগ্ন জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এসব জমিতে এখন চাষাবাদ করতে পারছেনা বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা।

কৃষক কামাল হাওলাদারসহ একাধিক এলাকাবাসী জানান, অবৈধ ভাটাগুলোর বিষয়ে উপজেলা ও জেলাসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। দুই বছর আগে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ছোট, ছোট কয়েকটি ইট ভাটা গুড়িয়ে দিলেও পুনরায় ওই ভাটাগুলো অসাধু কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে চালু করেছে দাবি করে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

স্থানীয়দের একাধিক অভিযোগ করলেও ফসলি জমি থেকে সরিয়ে নিচ্ছে না এসব ভাটা।

কৃষক কালু মিয়া বলেন, অবৈধ ইট ভাটার কারণে আমার ১০-একর জমিতে কোনো ফসল ফলাতে পারিনা। জমিগুলো কারো কাছে লগ্নী (বছর প্রতি ভাড়া) দিতে পারি না। চাষিরা এই জমি নিতে চাচ্ছে না।

স্থানীয় জামাল ভূঁইয়া, মতলব মুন্সি, আবদুল কাশেমসহ একাধিক এলাকাবাসী বলেন- কলমী ৯নং ওয়ার্ডের চর-মঙ্গল গ্রামে ফসলী জমি নষ্ট করে আবাসিক এলাকায় ড্রামসিট চিমনি দ্বারা লাকড়ি পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। হাজার হেক্টর জমির ফসলী ক্ষেত বনজ ও ফলদ বাগানসহ শতশত বসত বাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব অবৈধ ভাটার পাশে।

দক্ষিণ আইচা মানিকা ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা বলেন, প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত একাধিক ইট ভাটা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রশাসনের অনুমোদন ও ছাড়পত্র না থাকলেও অদৃশ্য অনুমোদনে চলছে ভাটাগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ভেঙে দেয়ার পরেও পুনরায় এ অবৈধ ইট ভাটা নির্মাণ করে ইট পোড়ানো হলেও ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে বলে তারা দাবি করেন।

সচেতন মহল বলছে, এর আগেও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় অবৈধ ইট ভাটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পরেও অবৈধ ভাটাগুলোর কার্যক্রম নজরে আসছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর। ভাটাগুলোতে নদী ও খাল থেকে ড্রেজিং দিয়ে মাটি এনে ইট তৈরি করা হচ্ছে বলেও ভাটা সংলগ্ন বাসিন্দারা দাবি করেন। তাঁরা বলেন, রাতভর ড্রেজিং ও বেকু দিয়ে ফসলী জমির পাশে মাটি কেটে গভীর খনন করে ইট তৈরির মাটি সংগ্রহ করছে ভাটাগুলো।

ইটভাটার মালিকরা জানান, তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছেন।

ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তোতা মিয়া জানান, ড্রামসিট চিমনি ব্যবহার করা দণ্ডনীয় অপরাধ। চরফ্যাশনে প্রায় ১২ থেকে ১৩টি অবৈধ ভাটা রয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে শিগগিরই একজন ম্যাজিস্ট্রেট আসবেন এবং ভাটাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। তবে ঠিক কতটি ভাটার অনুমোদন রয়েছে রয়েছে জানতে চাইলে তার সদুত্তর দেননি এ কর্মকর্তা।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.odhikar@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: inbox.odhikar@gmail.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড