রাকিব হাসনাত, পাবনা
বাবা হতদরিদ্র দিনমজুর। অন্যের জমিতে কাজ করে সামান্য আয়ে চলে সংসার। তাই বাবার সঙ্গে মেধাবী হুমায়ুন কবিরকেও দিনমজুরের কাজ করতে হয়। মেধাবৃত্তি দিয়ে হুমায়ুনের বই খাতা কলম কেনা হলেও প্রাইভেট পড়ার খরচ ও পোশাকের যোগান দেওয়া সম্ভব ছিল না দিনমজুর বাবার।
এতে বাধ্য হয়ে নিজের পড়াশোনার ক্ষতি করে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়িয়ে অর্থ উপার্জন করতে হয় হুমায়ুনকে। এভাবে দরিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় হুমায়ুন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
হুমায়ুন পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার চলনবিল অধ্যুষিত প্রত্যন্ত দিলপাশার ইউনিয়নের বেতুয়ান গ্রামের আব্দুল হাতেম সরদারের ছেলে। সে গ্রামের বিবি স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী।
এ দিকে পঞ্চম শ্রেণিতে মেধাবৃত্তি পাওয়া হুমায়ুন এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলেও অর্থের অভাবে ভালো কলেজে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমনকি পরিবারের দরিদ্রতার কারণে হুমায়ুন উপজেলা শহরের কলেজেও ভর্তি হতে পারবে কি-না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এতে ভালো কোন কলেজে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে হুমায়ুনের। পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কারণে গ্রামের কলেজ কর্তৃপক্ষ হুমায়ুনকে বিনা বেতনে পড়ানোসহ সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে হুমায়ুন ভালো কোনো কলেজে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হতে চায়।
জানা যায়, হুমায়ুনের বড় বোনকে কিছুদিন আগে বিয়ে দেয় নিরক্ষর বাবা-মা। সে সময় বিয়ের খরচ যোগাতে অনেক ধার দেনা করতে হয়েছে বাবা হাতেমকে। এখনো সেই ধার দেনা পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারকে। এ অবস্থায় হুমায়ুনকে ভালো কলেজে ভর্তি করা সহ পড়াশোনার খরচ যোগানো হতদরিদ্র বাবার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
হুমায়ুন জানায়, বাবার পক্ষে পড়াশোনার খোঁজ দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই বৃত্তি ও প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের পড়াশোনা চালিয়েছি। বাবার সঙ্গে দিনমজুরের কাজও করেছি। কিন্তু এখন ভালো কলেজে ভর্তি হতে গেলে টাকা লাগবে। তাই কেউ আর্থিক সহযোগিতা না করলে গ্রামের কলেজে ভর্তি হতে হবে। এরপরেও ভবিষ্যতে প্রকৌশলী হওয়ার চেষ্টা করব।
হুমায়ুনের বাবা আব্দুল হাতেম বলেন, দিন এনে দিন খেতে হয় আমাদের। ছেলের পড়াশোনার টাকা দেব কোথা থেকে। আল্লাহ জানেন টাকার অভাবে ছেলের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে কি-না।
সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য আরজু খান বলেন, ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী। তাই নিজের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সে প্রাইভেট পড়াতো। গ্রামের মানুষ আর্থিকভাবে অতটা সচ্ছল নয়। যে হুমায়ুনকে সহযোগিতা করবে। এ ক্ষেত্রে কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি সহযোগিতা করলে তবেই হুমায়ুন ভালো কোনো কলেজে পড়তে পারবে।
পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান বলেন, ছেলেটির পরিবার দরিদ্র হওয়ার পরও সে জিপিএ-৫ পাওয়া আনন্দের ব্যাপার। সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: inbox.odhikar@gmail.com
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড