• শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৭ আশ্বিন ১৪৩০  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন

সর্বশেষ :

sonargao

সন্তান জন্মের আধাঘণ্টা পর পরীক্ষা হলে মা!

  সাইফুল ইসলাম, শরীয়তপুর

২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪:৪১
সন্তান জন্মের আধাঘণ্টা পর পরীক্ষা হলে মা!
সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানের পাশে বসে আছেন এসএসসি পরীক্ষার্থী মা (ছবি : অধিকার)

প্রসববেদনা নিয়ে ভোরে শরীয়তপুর সদরের রূপসী বাংলা হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হয়েছিলেন এসএসসি পরীক্ষার্থী শায়লা আক্তার। গতকাল মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে দশটায় কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। পরীক্ষা শুরু ১১টার আগেই ছুটে যান কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিতে।

নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিয়ে আবার হাসপাতালে নবজাতকের কাছে ছুটে আসেন শায়লা। শায়লা আক্তার শরীয়তপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নীলকান্দি এলাকার সবুজ মিয়ার স্ত্রী।

শায়লার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আংগারীয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী শায়লা আক্তার। তিনি পাশের আংগারীয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নীলকান্দি এলাকার সবুজ মিয়ার সাথে বিয়ে হয় শায়লা আক্তারের। এরপরে সন্তান সম্ভবা হন শায়লা।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। ওই অবস্থায় তিনি পরীক্ষা দিতে থাকেন। মঙ্গলবার ছিল তার ভূগোল পরীক্ষা। রাতে প্রসব বেদনা উঠলে ভোরে তাকে জেলা সদরের রূপসী বাংলা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করেন স্বজনেরা।

এরপর ১০টা ৩০ মিনিটের সময় কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। বেলা ১১টার সময় পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। সুস্থভাবে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর ছুটে যান পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিতে। হাসপাতাল থেকে আংগারীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার।

পরিবারের সদস্যরা শায়লাকে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হন বেলা ১১টার আগেই। কেন্দ্র সচিব ও শিক্ষকদের সহায়তায় তিনি ছিটে বসে পরীক্ষা দেন। পরীক্ষা শেষে দুপুর দেড়টার দিকে আবার সন্তানের কাছে হাসপাতালে ফিরে আসেন। তার এমন অদম্য ইচ্ছে শক্তি দেখে শিক্ষক ও সহপাঠীরা অভিভূত ও আনন্দিত। আর ফুটফুটে কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ায় খুশি পরিবারের সদস্যরা।

শায়লা আক্তার বলেন, ছোট থেকেই পড়ালেখার প্রতি আমার অন্যরকম একটা অনুভূতি ছিল। আমি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। সন্তান পেটে নিয়েই ৮টি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। আজ লিখিত পরীক্ষার শেষ দিনে আমার কোল আলোকিত হয়েছে। সুস্থভাবে পরীক্ষা দিতে পারায় আমি আমার পরিবার শিক্ষক ও চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এখন আমি আমার কন্যা সন্তান সুস্থ আছি।

শায়লার মা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, আমি আমার মেয়ে নিয়ে অনেক গর্বিত। ছোটবেলা থেকেই ক্লাস বাই ক্লাস ও ভালো রেজাল্ট করেছে। এমন একটা অবস্থায় যে ও পরীক্ষা দিবে তা কখনোই কল্পনা করতে পারিনি।

শায়লার স্বামী সবুজ মিয়া বলেন, পরীক্ষা শুরু আগে থেকেই শায়লা আমাকে বলতো আমাকে তুমি শুধু একটু পড়ালেখার বিষয়ে সাপোর্ট দিও। স্বামী হিসেবে যতটুকু পেরেছি সব সময় ওকে সাপোর্ট দিয়ে গিয়েছি পড়ালেখার বিষয়ে। সন্তান জন্ম নেয়ার সাথে সাথেই সে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা দিবে কখনোই কল্পনা করতে পারিনি। আল্লাহ আমার কন্যা সন্তান ও কন্যা সন্তানের মাকে নেক হায়াত দান করুক।

রূপসী বাংলা হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ডি কে সঞ্জয় বলেন, নরমাল ওয়েতেই তার সন্তান জন্ম নিয়েছে। তার এক্সামের কথা আমাদেরকে তিনি জানান। তিনি প্রচণ্ড ইচ্ছে শক্তি নিয়ে আমাদেরকে বললে। আমরা দেখি শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ আছেন। পরিবারের সম্মতি নিয়েই এক্সাম দিতে যায়। এখন তার সন্তান এবং তিনি সুস্থ আছেন।

আংগারীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব আনোয়ার কামাল বলেন, মানুষের ইচ্ছা শক্তি থাকলেই যে মানুষ তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। এর বড় উদাহরণ এই শায়লা। প্রসব বেদনা উপেক্ষা করে সে পরীক্ষা দিয়েছে। আমরা একজন নারী চিকিৎসক উপস্থিত রেখেছিলাম তার জন্য। তার এই অদম্য ইচ্ছে শক্তি সত্যিই আমাদেরকে অভিভূত করেছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.odhikar@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: inbox.odhikar@gmail.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড